ঈদ মোবারক

শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,
কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,
বরষের পরে আসিলে ঈদ!
ভুখারীর দ্বারে সওগাত ব’ইয়ে রিজওয়ানের,
কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল- বাগের,
সাকীরে “জা’মের দিলে তাগিদ!

খুশীর পাপিয়া পিউ পিউ গাহে দিগ্বিদিক
বধূ জাগে আজ নিশীথ-বাসরে নির্নিমিখ!
কোথা ফুলদানী, কাঁদিছে ফুল,
সুদূর প্রবাসে ঘুম নাহি আসে কার সখার,
মনে পড়ে শুধু সোঁদা-সোঁদা বাস এলো খোঁপার,
আকুল কবরী উলঝলুল!

ওগো কাল সাঁঝে দ্বিতীয়া চাঁদের ইশারা কোন
মুজদা এনেছে, সুখে ডগমগ মুকুলী মন!
আশাবরী- সুরে ঝুরে সানাই।
আতর-সুবাসে কাতর হ’ল গো পাথর-দিল,
দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল,
কবুলিয়তের নাই বালাই।।

আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি,
দোযখে বেহেশতে সুল ও আগুনে ঢলাঢলি,
শিরী ফরহাদে জড়াহড়ি!
সাপিনীর মত বেঁধেছে লায়লী কায়েসে গো,
বাহুর বন্ধে চোখ বুঁজে বঁধু আয়েসে গো,
গালে গালে চুমু গরাগড়ি।।

দাউ- দাউ জ্বলে আজি স্ফূর্তির জাহান্নাম,
শয়তান আজ বেহেশতে বিলায় শরাব-জাম,
দুশম্ন দস্ত এক-জামাত!
আজি আরফাত-ময়দান পাতা গাঁয়ে- গাঁয়ে,
কোলাকুলি করে বাদশা ফকীরে ভায়ে-ভায়ে,
কা’বা ধ’রে নাচে ‘লাত-মানাত’।।

আজি ইসলামী ডঙ্কা গরজে ভরি’ জাহান,
নাই বড় ছোট-সকল মানুষ এক সমান,
রাজা প্রজা নয় কারো কেহ।
কে আমীর তুমি নওয়াব বাদশা বালাখানায়?
সকল কালের কলঙ্ক তুমি; জাগালে হায়
ইসলামে তুমি সন্দেহ।।

ইসলাম বলে, সকলের তরে মোরা সবাই,
সুখ-দুখ সম-ভাগ করে নেব সকলে ভাই,
নাই অধিকার সঞ্চয়ের!
কারো আঁখি-জলে কারো ঝাড়ে কি রে জ্বলিবে দীপ?
দু’জনার হবে বুলন্দ-নসীব, লাখে লাঝে হবে বদ-নসীব?
এ নহে বিধান ইসলামের।।

ঈদ-অল-ফিতর আনিয়াছে তাই নববিধান,
ওগো সঞ্চয়ী, উদ্বৃত্ত যা করিবে দান,
ক্ষুধার অন্ন হোক তোমার!
ভোগের পেয়ালা উপচায়ে পড়ে তব হাতে,
তৃষ্ণাতুরের হিসসা আছে ও-পেয়ালাতে,
দিয়া ভোগ কর, বীর দেদার।।

বুক খালি ক’রে আপনারে আজ দাও জাকাত,
করো না হিসাবী, আজি হিসাবের অঙ্কপাত!
একদিন করো ভুল হিসাব।
দিলে দিলে আজ খুন্সুড়ি করে দিললগী,
আজিকে ছায়েলা-লায়েলা-চুমায় লাল যোগী!
জামশেদ বেঁচে চায় শরাব।।

পথে পথে আজ হাঁকিব, বন্ধু, ঈদ মোবারক! আসসালাম!
ঠোঁটে ঠোঁটে আজ বিলাব শিরনী ফুল-কালাম!
বিলিয়ে দেওয়ার আজিকে ঈদ!
আমার দানের অনুরাগে-রাঙা ‘ঈদগা’রে!
সকলের হাতে দিয়ে দিয়ে আজ আপনারে-
দেহ নয়, দিল হবে শহীদ।।

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

বাংলাদেশ

নমঃ নমঃ নমঃ বাঙলা দেশ মমচির-মনোরম চির-মধুর।বুকে নিরবধি বহে শত নদীচরণে জলধির বাজে নূপুর॥ শিয়রে গিরি-রাজ হিমালয় প্রহরীআশিস্-মেঘবারি সদা তাঁর

বাকি অংশ »

প্রবর্তকের ঘুর-চাকায়

যায় মহাকাল মূর্ছা যায়প্রবর্তকের ঘুর-চাকায় ।যায় অতীতকৃষ্ণ-কায়যায় অতীতরক্ত-পায়-যায় মহাকাল মূর্ছা যায়প্রবর্তকের ঘুর-চাকায়!প্রবর্তকের ঘুর-চাকায়! যায় প্রবীণচৈতি-বায়,আয় নবীনশক্তি আয়।যায় অতীতযায় পতিত, ‘আয়

বাকি অংশ »

জন্মদিনের ফুল

কখনও লাস্য, কখনও লড়াই তুমি।ভেঙেছিলে মিথ, মিথ্যের কারিগরিঅক্ষর স্থায়ী। কলমেরা মরসুমি।আমরা এখনও তোমারই কবিতা পড়ি। আগুনের পাশে এলাচদানার ঘ্রাণহরিণের পাশে

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাব,বনভূমির ভিতরে আরও গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাব,আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড়

বাকি অংশ »

খিড়কি

খিড়কি ছিল পাশের বাড়িরখিড়কি ছিল মনেরখিড়কি ছিল যখন তখনখিড়কি কিছুক্ষণের । খিড়কি ছিল পথের পাশেহলুদ গাঁদাফুলের,খিড়কি ছিল আকাশ ভরামেঘের কালোচুলের

বাকি অংশ »
Scroll to Top