পথের বাঁকে 

: এই যে শুনছেন

-: আমাকে বলছেন?

: আপনি ছাড়া তো আর কাউকে দেখছি না এখানে।

-: দেখা বিষয়টা আপেক্ষিক। কাকে দেখছেন, কী দেখছেন, কেন দেখছেন তার ওপরে দেখার সংজ্ঞাটা কিন্তু পাল্টে যায়। যাই হোক, বলুন।

: আমি এই শহরে একদম নতুন। ঘুরতে বেরিয়েছিলাম তারপর পথ হারিয়ে ফেলেছি। আপনি কি বলতে পারেন, এই রাস্তাটা কোথায় গেছে?

-: আমরা সবাই হারিয়েছি কোনো না কোনো পথের বাঁকে। আর রাস্তার কথা
যদি বলেন, তাহলে তো প্রশ্নটা অনেক জটিল।

: আপনি কি সবার সাথেই এমন হেঁয়ালি করে কথা বলেন? নাকি মেয়েদের দেখলেই?

-:মিথ্যে বলব না। শাড়ি পড়া সুন্দরী রমণীদের দেখলে আমার ভেতরের বুনো কবিটা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায়। ভেতরের ছটফটে শব্দগুলো সুবোধ বালকের মতো লাইন দিয়ে সামনে দাঁড়ানো জীবন্ত কবিতাকে দেখতে থাকে।

: আচ্ছা এবার বুঝলাম, আপনি তাহলে কবি। সেটাই ভাবছিলাম, কবি না হলে এভাবে ইনিয়েবিনিয়ে অচেনা-অজানা একজনের প্রশংসা কেউ করতে পারে না।

-: প্রশংসা শব্দের মধ্যে একটা স্বার্থের ছায়া আছে। আপনার উপরে সেই ছায়া পড়ুক, সেটা চাইনা।

: এবার কষ্ট করে বলবেন কী, এই পথটা কোথায় গেছে?

-: এই পথ আপনাকে অনেক জায়গায় নিতে পারে। দিগন্তেও নিতে পারে, গন্তব্যেও নিতে পারে। আপনি কোথায় যেতে চান সেটা বলুন।

: আপনি লোকটা কিছুটা পাগল হলেও কথাগুলো কিন্তু বেশ লাগছে শুনতে। যদিও সুন্দর কথা সবসময় পথ দেখায় না, ভুলিয়েও দেয়। আপনি কোন দলের? পথ দেখান নাকি ভোলান?

-: আমি পথ চলার দলে। হারিয়ে যাওয়াটা আমার স্বভাব আর খুঁজে না পাওয়াটা আমার নিয়তি।

: আমি কী এখন স্বভাবের দখলে নাকি নিয়তির?

-: আপাতত এই মফস্বলে দুপুর রোদে নির্জন এই রাস্তার গোলকধাঁধায় আটকে আছেন। আগে সেখান থেকে উদ্ধার হয়ে নিন। বলুন কোথায় যাবেন?

: যাক এতক্ষণে সুস্থ মানুষের মতো কথা বলেছেন। আপনি যদি দয়া করে আমাকে বাজারের রাস্তাটা চিনিয়ে দেন তাহলেই কৃতার্থ হই। এরপরে আমি একাই চিনে নিতে পারব।

-: এখনো তো আপনাকেই চেনা হলো না। অন্যকিছু চেনাব কীভাবে? আমার সাথে দু-এক পা পথ চলতে আপত্তি না থাকলে, আপনাকে কিছুদূর এগিয়ে দিতে পারি।

: আপনাকে ক্ষতিকারক মনে হচ্ছে না। যাওয়া চলে।

-: দুপুর রোদে একজন ভদ্রমহিলার সাথে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া, বেশ রোমান্টিক কিন্তু।

: আবার শুরু করলেন? চলুন এগিয়ে যাই।

-: যখন পড়েছি তখন পথটাকে চিনে নেওয়া কর্তব্য। কীভাবে হারালেন এই শহরে?

: চাকরির সুবাদে গত পরশু এসেছি। উঠেছি অফিসের কোয়ার্টারে। আজকে বেরিয়েছিলাম শহরটাকে দেখতে। বের হয়েই এই বিপত্তি।

-: এই বিপত্তিতে আমার কিন্তু আপত্তি নেই। রোজ রোজ তো আর এই সৌভাগ্য হয় না।

: আপনার কথা কিছু বলুন। আচ্ছা দাঁড়ান আপনার মতো করে বলি, নেমেছিই যখন তখন পথটাকে চিনে নেওয়া কর্তব্য। কি বলেন?

-: বিশেষ কোনো বিশেষণ নেই আমার।
ছাড়ায়ে এ বিশ্বলোক, আমি বিশ্বের রূপ খুঁজি,
হারায়ে এ স্বপ্নলোক, আমি স্বপ্নের দিশা খুঁজি।
চেনা কি গেল আমাকে?

: তোমায় চেনার ইচ্ছে নিয়ে, পথের শেষে যাই,
শেষে গিয়ে আবার আমি, গোলকধাঁধা পাই।

-: কবিতা-টবিতা পড়েন বলে মনে হচ্ছে।

: কেন, সেটা কি শুধু আপনার সম্পত্তি?

-: একদম না, আমি কবিতা জমিয়ে রেখে তাকে সম্পদ বানিয়ে ফেলি না। পেলেই দিয়ে দেই অন্যকে। তা না হলে কবিতা জমে গিয়ে ধুলো পড়ে। কবিতার শরীর থেকে ধুলো ঝাড়তে ইচ্ছে করে না।

: তো আপনার সেই অন্যরা কে?

-: গাছের পাতা, রাতের অন্ধকার, খোঁপার চুল, শাড়ির কুঁচির ভাঁজ আরো কতো কি!

: হুম এখন বুঝতে পারছি, এই দুপুর রোদে কেনো আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। কবিতা লিখছিলেন বুঝি?

-: শুরু করেছিলাম জানেন, এরপর আপনাকে দেখে শব্দরা যে কোথায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ল! কি করি বলুন তো?

: দুপুর রোদে মনের কোণে শব্দরা আজ নিরুদ্দেশ,
হাঁটছ তুমি হাঁটছি আমি থাকছে শুধু স্মৃতির রেশ।

-: হাঁটতে হাঁটতে যতবারই দিচ্ছ হাত কুঁচির ভাঁজে
ঝড় উঠেছে কোথায় যেন তাল কেটেছে বুকের খাঁজে।

: অনেক কাব্য করেছেন। খেয়াল আছে তো কোন পথে চলেছেন?

-: এই পথেরই পথিক আমি মরীচিকাতেই হারাই রোজ
আজ না হয় তোমার সাথেই চলুক সেই পথের খোঁজ।
আমরা পৌঁছে গেছি আপনার গন্তব্যে। বাঁদিকের পথে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার বাসস্থানে, আর ডানদিকের পথে চাইলে আবার হারিয়ে যেতে পারেন।

: আপনি কোন পথে যাবেন?

-: গন্তব্য আমার লক্ষ্য নয়, সে কথা তো আগেই বলেছি। তাই হারিয়ে যাবার পথই আমার নিয়তি।

: আবার দেখা হবে?

-: হ্যাঁ অবশ্যই। আবার যেদিন আপনি হারিয়ে যাবেন। আমাকে পথের বাঁকেই পাবেন।

: বারবার হারানোর ইচ্ছে নেই যে। কিন্তু আপনার সাথে দেখা করার জন্য তো হারাতেই হবে দেখছি।

-: ভালো বলেছেন, অসুবিধা নেই, আমি খুঁজে নেব। এবার বিদায়। আপনার পথ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

: দেখা হবে, একেবারে হারিয়ে যাবেন না কিন্তু।

-: দেখা হবে, কোনো এক পথের বাঁকে।

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

একটি সংলাপ

মেয়ে: তুমি কি চাও আমার ভালবাসা ?ছেলে: হ্যাঁ, চাই !মেয়ে: গায়ে কিন্তু তার কাদা মাখা !ছেলে: যেমন তেমনিভাবেই চাই ।মেয়ে:

বাকি অংশ »

দেখা

ভালো আছো?-দেখো মেঘ বৃষ্টি আসবে।ভালো আছো?-দেখো ঈশান কোনের আলো, শুনতে পাচ্ছো ঝড়?ভালো আছো?-এইমাত্র চমকে উঠলো ধপধপে বিদ্যুৎ ।ভালো আছো?-তুমি প্রকৃতিকে

বাকি অংশ »

পথের বাঁকে – ২

ছেলেঃ এই যে শুনছেন?মেয়েঃ আপনি! কি সৌভাগ্য আমার। মেঘ না চাইতেই জল! আপনি তো বলেছিলেন, আপনাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য, পথের

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাব,বনভূমির ভিতরে আরও গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাব,আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড়

বাকি অংশ »

খিড়কি

খিড়কি ছিল পাশের বাড়িরখিড়কি ছিল মনেরখিড়কি ছিল যখন তখনখিড়কি কিছুক্ষণের । খিড়কি ছিল পথের পাশেহলুদ গাঁদাফুলের,খিড়কি ছিল আকাশ ভরামেঘের কালোচুলের

বাকি অংশ »
Scroll to Top