ছেলেঃ এই যে শুনছেন?
মেয়েঃ আপনি! কি সৌভাগ্য আমার। মেঘ না চাইতেই জল! আপনি তো বলেছিলেন, আপনাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য, পথের বাঁকে হারাতে হয়। আজ নিজেই ধরা দিলেন যে!
ছেলেঃ আমি হারিয়েছি বলেই তো আপনি খুঁজে পেলেন। বলেছিলাম তো, হারিয়ে যাওয়াটাই আমার নিয়তি। মেঘ আপনি চাননি; এটা বলে দেওয়াই যায়। আর জল পেয়েছেন, কারণ আপনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন। ঠিক বলছি তো?
মেয়েঃ আপনার এই কাব্যের সাথে পাল্লা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। (হাসি) তবে একথা সত্যি- তৃষ্ণার্ত সবাই, কেউ জলের, কেউ ভালোবাসার, কেউ দুঃখের।
ছেলেঃ আপনি কিসের?
মেয়েঃ একথা শুনতে হলে যে আমাকে এককাপ চা খাওয়াতে হয়। হাঁটবেন নাকি আজকে দু-এক পা?
ছেলে: (হাসি) ভাগ্যিস! গরীব কবির কাছে শুধু চা চেয়েছেন। যদি বলি, আজকে আপনার সাথে হারানোর লোভেই এই সকালে এখানে উদয় হয়েছি। মানবেন?
মেয়ে: সবকিছু মেনে নিতে তো মন সায় দেয় না (দীর্ঘশ্বাস)। তবে, এই সকালবেলা আপনাকে খুঁজে পাওয়াটাই সত্য, অন্যকিছু নয়। চলুন যাওয়া যাক।
পুঃ-জানেন, এই সকালের জন্য আপনার পরনের শাড়িটা একটু বেমানান। সুর যেমন সময় ভেদে ভিন্ন রকম, ঠিক একইভাবে মেয়েদের শাড়িরও সময় মেনে রং বদলানো উচিৎ। এই যেমন ধরুন- সকালে রঙ হবে সাদা, দুপুরে হলুদ আর বিকেলে তাতে লাল রং মিশে হয়ে যাবে সোনালী। রাতের রং নীল, লাল বা কালো।
মেঃ -অভিজ্ঞতার ঝুলি একদম পরিপূর্ণ দেখছি (হাসি)
পুঃ -হাসবেন না! হাসবেন না! এই যে ধরুন আপনার শাড়ির কালো রঙ আজ সকালের আলোয় কেমন একটা অন্ধকার মিশিয়ে দিচ্ছে। বড্ড বেমানান।
মেঃ অনেক হয়েছে, এবার চা খেতে কোথায় যেতে হবে সেটা বলুন।
পুঃ-এইতো সামনের গাছতলায়। আপনার আপত্তি আছে?
মেঃ-একদম না। প্রথম দেখার পরে সেই যে হারালেন অনেক খুঁজেও আপনাকে পাইনি, জানেন। আজ যখন না চাইতেই আপনাকে পাওয়া গেল, তখন স্থান মুখ্য নয়।
পুঃ-আপনার নাম জানতে পারি?
মেঃ-সন্ধ্যা। আপনি?
পুঃ-তাহলে তো অগত্যা বলতেই হয়, আমি সকাল।
মেঃ-হেঁয়ালি করছেন?
পুঃ-একদম না। আমার নাম সকাল।
মেঃ-তা আমাকে দেখার লোভ কেন হলো এই সকাল সকাল?
পুঃ-আমার শব্দগুলো আপনি চুরি করেছেন। সেগুলো ফেরত চাই।
মেঃ-বলেন কি! শেষ পর্যন্ত চৌর্যবৃত্তির দায়ে অপরাধী হলাম!
পুঃ-সত্যি বলছি। আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার কবিতারা যে কোথায় হারিয়ে গেল। তাই আপনার শরণাপন্ন হলাম।
বুকের ভেতর শব্দ হারায়
মনের ভেতর অল্প
শাড়ির আঁচলে চোখের কাজলে
হারিয়ে যাওয়ার গল্প।
মেঃ-অল্পস্বল্প গল্প দিয়ে
জীবন চেনা দায়
হারিয়ে যেও না কবি তুমি
নদীর মোহনায়।
কি বুঝলেন?
পুঃ-বুঝলাম আমি বিপদে পড়েছি। আমার শব্দগুলো খুঁজে পেতে এবার আপনার মাঝেই হারাতে হবে দেখছি।
মেঃ-হারাতে চান?
পুঃ-আমি তো হারিয়েছি সেই প্রথম দেখাতেই। সেই দুপুর রোদে আপনার সাথে চলতে চলতে কখন যে নিজের পথটাই শেষ হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। এখন শুধু পথ খুঁজে পাবার চেষ্টা করছি মাত্র।
মেঃ-ভুল পথে পা বাড়াচ্ছেন আপনি। এ পথ আপনার জন্য নয় কবি। এ পথে কবিতা নেই, গল্প নেই, স্বপ্ন নেই, আশা নেই। শুধুই অন্ধকার। এ আপনার পথ নয় কবি।
পুঃ-পথের অন্ধকার তো গন্তব্যের আলোকে নেভাতে পারে না। সেই আলোর দিকে তাকিয়েই পথিক পথ চলে। আমি চাতকের মতো না হয় সেই আলোর দিকেই তাকিয়ে থাকব৷ দেবেন একটা সুযোগ?
মেঃ-আপনার কথাগুলো সকালের মতোই স্নিগ্ধ। কি আশ্চর্য রকম আশাজাগানিয়া। আপনার শব্দগুলো যদি সত্যি সত্যি মনের মধ্যে যত্নে রাখতে পারতাম তাহলে সকালের সূর্যটা আমার মনের দিগন্তে প্রতিদিন ঝলমল করত। কিন্তু আমার আকাশে তো আজীবন গ্রহণ লেগেই থাকে কবি। তা সরাবো কীভাবে?
শত আঘাতে নিঃস্ব আমি
পূর্ণগ্রাসে অন্ধকার
সকাল যেন মরীচিকা
শব্দগুলো নির্বিকার।
পুঃ-গ্রহণ তো সাময়িক মাত্র। তার কি সাধ্য আছে সারাজীবনকে অন্ধকারে রাখবার? আমি না হয় প্রতিদিন সন্ধ্যার আকাশে একটা করে শুকতারা জ্বালিয়ে দেবো। একদিন মিটিমিটি তারায় ভরে উঠবে সমস্ত আকাশ। দেবেন আপনার আকাশটা আমায়?
মেঃ-ভয় হয় কবি। দূর থেকে দেখার আনন্দ যদি কাছে আসলে হারিয়ে যায়। যদি প্রতিদিনের স্পর্শ হঠাৎ ছুঁয়ে দেওয়ার আনন্দকে নষ্ট করে দেয়?
পুঃ-তাহলে আমি প্রতিদিন নতুন কবিতা লিখব। নতুন নতুন নামে আপনাকে ডাকব। প্রতিদিন নতুন পথে হারাব। আপনার সাথে প্রতিদিন নতুন পথের বাঁকে দেখা হবে। আপনার মাঝে নতুন নতুন শব্দ খুঁজব।
সকাল থেকে সন্ধ্যা নামুক
নতুন নতুন দিন,
নতুন বাঁকে নতুন পথে
স্বপ্ন দেখার ঋণ।
মেঃ-তবে তাই হোক কবি। স্বপ্ন দেখার ঋণটা না হয় আপনার কাছে থেকেই নেব। কিন্তু আজ এ পর্যন্তই। কিছু কথা না হয় তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য।
পুঃ-কেন? আজ নয় কেন?
মেঃ-কিছু কথা অপেক্ষায় সুন্দর হয়। একবার বলা হয়ে গেলেই তা যেন আর সুন্দর থাকে না। থাকুক না সেটা না বলা কথার দলে। মনের কোণে থাকুক না হয় আরো কিছুদিন।
পুঃ-হয়ত আপনিই ঠিক। কিছু কথা অব্যক্ত থাকুক। শুধু আমাদের মন জানুক। শুধু এই গাছতলা সাক্ষী থাকুক সেই না বলা কথার।
মেঃ-আজকে আসি তাহলে। আপনার পথ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
পুঃ-আবার দেখা হবে?
মেঃ-দেখা হবে। কোনো এক পথের বাঁকে।
একটি সংলাপ
মেয়ে: তুমি কি চাও আমার ভালবাসা ?ছেলে: হ্যাঁ, চাই !মেয়ে: গায়ে কিন্তু তার কাদা মাখা !ছেলে: যেমন তেমনিভাবেই চাই ।মেয়ে: