তোতা খালা,
পাখির নামে তোমার নাম কে রেখেছিল জানি না,
সবুজ তোমার খুব পছন্দের রং ছিল,
আর পাখির মতোই মিষ্টি ছিল তোমার কণ্ঠস্বর
আদরকাতর এক বালকের বিস্ময় ছিলে তুমি।
দীর্ঘ ছুটিতে বাবা-মা’র সঙ্গে করাচি থেকে উড়ে এসে
বালকটি তার মুখ লুকোতো তোমার আঁচলেরই নিচে।
কী লাবণ্য ছিল তোমার ফরসা মুখে আর হাসিতে ছিল মধু-
গ্রামবাংলার নারীরা বুঝি এরকমই লক্ষ্মী হয়
আমার পৃথিবী ছিলে তুমি, ছিলে প্রথম ভালবাসা।
সবুজ তোমার খুব পছন্দের রং ছিল,
জানি না সেদিন তুমি সবুজ শাড়ি পরেছিলে কি না,
যখনই তোমার কথা ভাবি চোখে ভাসে শুধু সবুজ আর সবুজ-
স্বদেশের শস্যশ্যামল প্রান্তরের মতো,
বৃক্ষের সতেজ চঞ্চলতার মতো,
তোমার নামে নাম রূপসী পাখির মতো সবুজে সবুজ,
আহা সহস্র সবুজ,
সেই সবুজের ভেতর দেখি লাল রক্তের ছোপ!
কটা গুলি লেগেছিল তোমার শরীরে,
তোমার সবুজ শাড়ি কতখানি লাল হয়েছিল আমার জানা নেই।
সমস্ত বর্বর সৈনিকরা আচমকা ব্রাশফায়ার শুরু করে দিয়েছিল।
যদি তারা তোমাকে তুলে নিয়ে যেত তাহলে কী হত?
তুমি কি বেঁচে থাকতে অর্থহীন বীরঙ্গনা খেতাব নিয়ে-
নাকি আত্মহননের পথ বেছে নিতে আমি অনুমান করতে ব্যর্থ।
গণআদালতে কজন বীরাঙ্গনা এসেছিলেন।
আমার কান্নার বয়স নেই, তবু তাঁদের দেখে খুব কান্না পেয়েছিল।
কী সম্মানই না আমরা তাঁদের করছি বাইশ বছর ধরে।
করুণ বেঁচে থাকা কিংবা গৌরবময় মৃত্যু
কোনটা তোমার জন্য শ্রেয় ছিল আমি জানি না
বাস্তবতা হল তুমি নেই তোতা খালা,
শুধু জেগে আছে সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ-
যেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
আজ পতাকার দিকে তাকালে তোমার সবুজ শাড়ি আর
লাল রক্তের কথা মনে পড়ে যায়
তোমার সবুজ শাড়ি, তোমার বুকের রক্ত,
তোমার সম্ভ্রম দিয়ে বোনা আমাদের এই জাতীয় পতাকা।
তোতা খালা,
যখন পতাকাকে স্যালুট করি,
তখন তোমাকেই অভিবাদন জানাই-
যখন পতাকার নিচে এসে দাঁড়াই,
তখন আসলে তোমার স্নিগ্ধ আঁচলের স্নেহেই জড়াই।
এই পতাকার জন্যে আজ আমার এক চোখ অশ্রু
অন্য চোখ অগ্নি!
তোতা খালা, তুমি আমাকে আশীর্বাদ কর
তোমার রক্তভেজা নরম বুকে মাথা রেখে শেষবার কাঁদতে দাও
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে দাও।