বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩

জয়িতা ও শোভন- একে অপরকে ভালোবাসে। এক জীবনে তারা কাছে পায় না নিজেদেরকে। তবুও তাদের ভালোবাসা, প্রেম আর বিরহের গল্প শেষ হয় না। সঙ্গে একে একে যুক্ত হয় জীবন বাস্তবতার নানা ঘটনাপ্রবাহ। দীর্ঘ একটি গল্পের মধ্যে শিল্পী শুক্লা রায় নিপুণভাবে যুক্ত করেন প্রাসঙ্গিক অনেকগুলো কবিতা।
আর এভাবেই কথা ও কবিতায় তিনি মন ভরিয়ে দেন মিলনায়তন ভর্তি দর্শক শ্রোতাদের। রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় শুক্লা রায়ের একক আবৃত্তি সন্ধ্যা। ছুটির দিনটিতে সেখানে ছিল সংস্কৃতিপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়।
‘আমার আপন আলোয়’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানে কবিতার সঙ্গে সেতারের ঝংকার তোলেন মোরশেদ খান। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্কে এসে যোগ দেন বিশিষ্ট বংশীবাদক মোহাম্মদ মাজিদ। তাহরিনা পারভীন প্রীতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ক্রিষ্টিনা লিপি রোজারিও ও রিচার্ড রিকি গোমেজ। শিল্পী শুক্লা রায়ের জীবনী পাঠ করেন পারভীন সুলতানা।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে শুদ্ধ শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ‘নান্দনিক’। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নান্দনিকেরও যাত্রা শুরু হয়। আয়োজন সহযোগী হিসেবে ছিল আবৃত্তি অনলাইন ও সাহিত্য একাডেমি। অনুষ্ঠানে শিল্পী শুক্লা রায় একদিকে যেমন অসাধারণ ভঙ্গিমায় দর্শকদের গল্প শুনিয়েছেন, অন্যদিকে আবৃত্তি করেছেন অনেকগুলো কবিতা।
শুরুতেই শিল্পী পরিচয় করিয়ে দেন গল্পের প্রধান দুই চরিত্র জয়িতা আর শোভনের সঙ্গে। এরপর তাদের গ্রামের প্রসঙ্গ এনে তিনি আবৃত্তি করেন জসিমউদ্দিনের ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতাটির অংশবিশেষ। বাঁশির সঙ্গে দেশের গান মিলিয়ে পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে ওঠে।

জয়িতাদের পরিবারের কথা বলতে গিয়ে আসে শামসুর রাহমানের ‘দু:খ’ কবিতাটি। আবার সমাজে নারীদের দুর্দশার চিত্র আঁকতে শিল্পী পাঠ করেন কবিতা সিংহের ‘আমিই সেই মেয়ে’ কবিতা থেকে। ‘ছবির ফ্রেম’ নামে নিজের লেখা একটি কবিতাও আবৃত্তি করেন শুক্লা রায়।
দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ আর মহান স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস উঠে আসে কথামালায়। শিল্পী শুক্লা রায় আবৃত্তি করেন নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’। রবী ঠাকুর কিংবা নজরুলের গানের ভিন্নধর্মী পরিবেশনা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে।
তাদের কবিতার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি শহীদ কাদরী, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং রফিক আজাদও। জয়িতা ও শোভনের মিষ্টি প্রেম ফুটে ওঠে রুদ্র গোস্বামীর ‘অসুখ’ কিংবা আবিদ আজাদের ‘বোতাম’ কবিতায়।
আবার দীর্ঘ অপেক্ষার আকৃতি ছিল জীবনানন্দ দাসের ‘পঁচিশ বছর পরে’ কবিতায়। পাওয়া না পাওয়ার মাঝেও আশা থাকে, থাকে হতাশাও। আশরাফুন নাহার লিউজার ‘স্বপ্নগুলো হয়তো অহেতুক’ কবিতাটিও ছিল তেমনি। এভাবেই এগিয়ে যাওয়া অনুষ্ঠানে কবিতা আর কথামালার মাঝে ছিলো বেশ কয়েকটি গানের অনবদ্য সংযোজন।
শিল্পী শুক্লা রায় বলেন, ‘দীর্ঘ প্রস্তুতি ও অনুশীলনের পর আমরা এই পরিবেশনাটি দর্শকদের উপহার দিয়েছি। একক আবৃত্তি সন্ধ্যা হলেও, অনুষ্ঠানটিকে আমরা নতুনভাবে সাজিয়েছিলাম। সবার ভালো লেগেছে দেখে, আমার মনে হয়েছে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ভবিষ্যতেও দর্শকদের চমৎকার কিছু অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে’।
সূত্র: একাত্তর টিভির অনলাইন থেকে।