অ্যালবাম 

মা, তোমাকে হটাত এই
২০শে সেপ্টেম্বরের ভোরে মনে পড়লো।
এই মেঘ ও রৌদ্রের শারদীয়া আলো
তোমার ফোটোতে আলোকসম্পাতের মতো খেলা করছে।
মা তোমাকে মনে পড়ছে
এই ২০শে সেপ্টেম্বরের ভোরে।

মা, মনে আছে—
আমার ট্রেনের শব্দে তুমি চায়ের জল চাপাতে
ফি-শনিবার বিকেলে ;
আমি শিঙাড়া হাতে গেটে দাঁড়াতেই—
তোমার মরণজয়ী হাসিমুখ
আর চিনেমাটির ক্রকারিজের রুনুঠন।
অথচ তখন তোমার তিপ্পান্ন বছর চার মাস চলছে।
একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছ,
আমি বুঝতে পারিনি।
তোমার হাতের ছোঁয়ালাগা কাঁপে চুমুক দিয়ে
আমি তাকিয়ে থাকতাম
সদ্য বিকেলের গা ধুয়ে আসা—
বাতাসে সাবানের গন্ধ ছড়ানো
তোমার সুন্দর ফর্সা পা-দুটোর দিকে।
আমার খুব ইচ্ছে হতো গুণগুনিয়ে ধরি—
“ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি”
আমার লজ্জা করত তোমার সামনে গান ধরতে।

তুমি সেকথা যেন বুঝতে পেরে
হটাত সেই বিকেলী আড্ডায় গেয়ে উঠতে
“ওরে নীল যমুনার জল…”

আমার বুকের মধ্যে হটাত খুশির আটশো পায়রা
কী দুরন্ত আবেগে ডানা ঝাপটাতো
আমি বোঝাতে পারতাম না।
একটার পর একটা গান।

একসময় গান থামলে
আদুরে গলায় তুমি শুনতে চাইতে—
‘ঝড়ের খেয়া’
আমি শিল্পী মায়ের সামনে মাথা নত শ্রদ্ধায়
আবৃত্তি করতাম—
‘বীরের এ রক্তস্রোত
মাতার এ অশ্রুধারা…’
কোনদিন শেষ করতে পারিনি ;
তুমিও কাঁদতে আমিও কাঁদতাম,
গলা বুজে আসতো।
সারা সপ্তাহের ক্লেদ
সাতদিনের গ্লানি
যন্ত্রণা হতাশা ধুয়ে মুছে যেত চোখের জলে
শনিবারের শেষ বিকেলে
আমি তোমাকে ধরে আবার উঠে দাঁড়াতাম।

তোমার মনে আছে মা?
অন্ধকার ফেলে দিয়ে সকালের আলোটুকু নিতে হয়—
তোমার কাছে শিখেছি।
হারমোনিয়ামের প্রথম সরগম
তোমার কাছে পেয়েছি।
পথের পাঁচালী আর অপরাজিতার গল্প
তোমার কাছে শুনেছি।
উনুনের তীব্র আঁচে রান্নাঘরে বসে গান গাওয়া যায়
তোমার কাছে জেনেছি।
দেখা হলে হাতে হাত ছুঁয়ে বন্ধু হয়ে যাওয়া
তোমার কাছেই সব পাওয়া।
আমি তাই দুঃখ পেলে কাঁদি
আনন্দে পাগল হয়ে হাসি।
মাঝে মাঝে মৃত্যুর মুখে বেড়াতে গিয়েও
ফিরে ফিরে আসি।
মা, আমাকে কতবার জীবন ফিরিয়ে দিলে ;
অথচ কখন তুমিই মৃত্যুর কাছে ধরা দিলে—
বুঝতে পারিনি।

সে বছর আমি মা-দুর্গার মুখদর্শন করিনি ;
সে বছর পিতৃ-তর্পণহীন আমি পালিয়ে বেড়িয়েছি।
ক্যাসেটে তোমার গান এখনও রয়েছে ;
এখনও ভাসছে তোমার শাড়ির গন্ধ, চুলের গন্ধ…

গ্রীষ্ম দগ্ধায়, শ্রাবণ বর্ষায়, শীত আসে ফিরে যায়,
বসন্তও আসে ;
তোমার কৃষ্ণচূড়া ভেসে যায় কমলা রঙের বন্যায়।

তোমার বাড়িতে আমরা সবাই খুব সুখে আছি।
তোমার হারমোনিয়াম
তোমার গানের খাতা
তোমার প্রথম জামদানি
তোমার কাশ্মিরী শাল
ন্যাপথলিন দেওয়া বাক্সে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।
সব স্মৃতি নিয়ে আমিই শুধু জেগে আছি—
ক্যাসেটে তোমার গান শুনতে শুনতে ;
“ওরে নীল যমুনার জল…”

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

মা

যখন ডাকি শিউলি হয়েশরৎ তখন
ভোরের হাওয়ায় বলে
কান্না রাখিস না, মা তো ছিলই মা তো আছেই,
সবখানেতেই মা
যখন ডাকি মা
সহস্র চোখ বিপন্ন

বাকি অংশ »

যে মেয়েটি চলে গেছে

ঐ টুকু তার চাওয়া ছিলএক চিলতের দাওয়াশিউলি শরৎ ছটফটে মেঘসারা আকাশ ছাওয়াযেতে গিয়েও থমকে যাওয়াপ্রানের কুটুমজনঘর পেরিয়ে ধান ভরা মাঠসবুজ

বাকি অংশ »

আজ চৈতালি পূর্ণিমা!

চাঁদ উঠছে, ভয়ের অন্ধকার দূরকরা এক বিশাল রুপোর থালাথেকে গলে গলে নামছে, আহা,ভালোবাসার চন্দ্রমা–কানের কাছে বিরক্তিকর বেজে ওঠা কাঁসর ঘন্টা,ধানিপটকাগুলো

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু হচ্ছে ২৪ মে

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি প্রবাসের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসবের নাম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আগামী ২৪ মে শুক্রবার থেকে

বাকি অংশ »

কবিতা, গান আর উৎসবে সাফল্য উদযাপন

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পাওয়া ত্রিশজনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়েছে নিউইয়র্কে। প্রতি বছরের মতো এবারও ভিন্নধর্মী এমন অনুষ্ঠানের

বাকি অংশ »
Scroll to Top