চাঁদ উঠছে, ভয়ের অন্ধকার দূর
করা এক বিশাল রুপোর থালা
থেকে গলে গলে নামছে, আহা,
ভালোবাসার চন্দ্রমা–
কানের কাছে বিরক্তিকর বেজে ওঠা কাঁসর ঘন্টা,
ধানিপটকাগুলো আপাতত চুপ করে গেছে।
এবার তুমি, আকাশ থেকে
আকাশে নিঃশব্দে হেসে ওঠো, শ্যামলিমা
আজ যে বসন্তের শেষ পূর্ণিমা!
আলো,আলো, আলোয় আলো জীবন চাই।
চা বাগানের উত্তর বাংলায় থাকলে,
গোধূলির আভায় মাখামাখি
ব্যালকনি থেকে তোমাকে
ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাতে পারতাম।
সারাটা দিনের আলোয় এখন সে হৃদয় খুলেছে যে!
সে না হয় নাই হল,
তবু, তোমার রাঢ় বাংলার শালবনে,
পাতায় পাতায় বনদেবীর কবিতা,স্পষ্ট ফুটে উঠেছে,
একটু অনুভব করলেই দেখতে পাবে।
তোমার আমার সেই মহানির্জন
স্টেশনের শূন্যতায় বসে,
পথের কবি বিভূতিভূষণ এখন
নতুন অভিযাত্রিক লিখছেন।
লম্বা প্ল্যাটফর্মের অন্যপ্রান্তে
একলা পলাশ গাছটির দিকে
চেয়ে,আপাদমস্তক স্তম্ভিত চাঁদের
গুঁড়ো গুঁড়ো বিন্দু মেখে,
চিরদিনের জীবনানন্দ যেন কোথায় হারিয়ে গেছেন!
শ্যামলিমা, আজ যে পাগল
ঋতুরাজের শেষ পূর্ণিমাযাপন!
আলো,আলো, আলোয় আলো জীবন চাই!
পাঁচপাপড়ির জবা ঝোপের ঘন
সবুজ আড়ালে, উল্টোনো পেয়ালার মতো
ছোট্ট নীড়ে টুনটুনি দম্পতির ঠোঁটে
ঠোঁট, একটু কিচিরমিচির,দূর করে দিয়েছে সব ভয়।
আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি–
তোমার একলা ঘরের টেবিলে
আলস্যে শুয়ে আছে
স্বপনবুড়োর বাবুই বাসা বোর্ডিং,
আর জসীমউদ্দীনের ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়।
যাবতীয় বিষণ্ণতা ভুলে, খোলা জানলার ফাঁক গলে
তাদের ওপরেও,দ্যাখো দ্যাখো,
জোছনা,জোছনা,জোছনার বুটিকাটা আঁকিবুঁকি!
আলো,আলো,আলোয় আলো সারা জীবন চাই।
শ্যামলিমা ও শ্যামলিমা
তোমাদের আলিশান ছাদের দরাজ
হৃদয়ে লুটিয়ে আছে মোমজোছনার রূপকথা!
জোছনা কারোর সঙ্গে আড়ি করেনা শ্যামলিমা,
জোছনা অসহায় গেরস্থালির শূন্য
দাওয়ায় রেখে আসে চাল, ডাল,
আলু, লাউকুমড়োর স্নিগ্ধ হাসি।
বিপদের চাঁদ সবার বাড়ি যায়–
না, কোনো লুকোনো ক্যামেরার নজরদারি নেই।
ও বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বসিত চাঁদ,ও চৈতালি রাতের স্বপ্ন,
এবার বুকের আঁচল সরাও!
আলো,আলো,আলো চাই,
আলোয় আলো মুঠো মুঠো জীবন চাই শ্যামলিমা!