তখনো আসিনি এই পৃথিবীতে, থাকি মামণির পেটে
নাম ঠিক করে রেখেছিলো বাবা ডিকশনারিটা ঘেঁটে।
মার পেটে থেকে আগ্রহভরে বাবাটাকে দেখি রোজ—
কাজ থেকে ফিরে বাড়িতে এসেই করছে মায়ের খোঁজ।
জানতে চাইছে আজ আমি বেশি ঝামেলা করেছি কী না
শুনে মার পেটে আমি হেসে উঠি তাক ধিনা ধিন ধিনা!
মামণি আমার সারাদিনমান অতি সাবধানে ধীরে
রান্নার পরে গুছিয়ে রাখতো ছোট সংসারটিরে।
বাবা ফিরে এলে দু’জনে গল্পে রাত করে দিতো পার
আমাকে নিয়েই পরিকল্পনা স্বপ্নের সমাচার—
আমি ‘খোকা’ হলে কী কী করা হবে আমি ‘খুকু’ হলে কী কী
তালিকাটা শুনে রাতের আকাশে তারাদের ঝিকিমিকি!
মেয়ে হলে নাম রাখা হবে ‘দ্যুতি’ ছেলে হলে ‘অর্জুন’
মায়ের হাতের কাচের চুড়িরা বেজে ওঠে ঝুনঝুন!
একাত্তরের উত্তাল মার্চ রেসকোর্স ময়দানে
লাখ লাখ লোক জমায়েত হলো মুজিবের আহ্বানে।
বাবাটাও ছিলো শেখ মুজিবের সাতই মার্চের সভায়
শুনেছি সেদিন উঠেছিলো ঝড় পলাশে রক্তজবায়।
পঁচিশে মার্চে রাতের আঁধারে গণ-হত্যার শুরু
সন্তান পেটে অসহায় মা-র বুক কাঁপে দুরু দুরু…
পাকিসৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়লো, দেশের বিপদ ভারী
আমাকে ও মাকে একা ফেলে বাবা সীমান্ত দিলো পাড়ি।
আমার বাবাটা মুক্তিযোদ্ধা! আহা সে কী গৌরব
বুকের ভেতরে সহস্র পাখি করে ওঠে কলরব!
নিজে বাঁচতে ও আমাকে বাঁচাতে মামণির সংগ্রাম
সন্তান পেটে পালিয়ে বেড়াতো এই গ্রাম সেই গ্রাম…
আমি জন্মেছি যুদ্ধের মাঝে মহাক্রান্তির ক্ষণে
বাবা আসে নাই, কী করে আসবে সে ছিলো রণাঙ্গনে!
তিরিশ লক্ষ শহীদের প্রাণ এনে দিলো স্বাধীনতা
বাবার জন্যে ছোট এই বুকে জমে ছিলো কতো কথা…
বাবার সঙ্গীসাথিরা ফিরলো। ফিরে আসে নাই বাবা
বিধবা মায়ের শাদা শাড়ি দেখো ইতিহাস খুঁজে পাবা…
অপরূপ এই দেশটা আমার বাবার রক্তে কেনা
না দেখা বাবার জন্যে কষ্ট জানি কেউ বুঝবে না…
পতাকার লাল সূর্যের মাঝে বাবার রক্তমাখা
বাবার ছবিটা বাংলাদেশের পতাকায় আছে আঁকা।