ভালবাসা যদি বিপজ্জনক হয়
অঘ্রাণ হবে রাত্রে হিরণ্ময়।
হরিণ যখন হেমন্ত রাত পায়
মানুষের পাপ কুয়াশায় ঢেকে যায় ।
চাঁদের ভেতর আমি নবান্ন করি
মাঠে মাঠে আজ ধান কাটা হল সারা
তোমার ভেতরে আমি নবান্ন করি
আমার ভেতরে গোধূলির আশকারা ।
সোনালী যখন হয়ে ওঠে নিজে সোনা
সোনালী যখন ধানখেত ছুঁয়ে যায়
চাঁদ থেকে চাঁদ নেমে আসে পৃথিবীতে
ইরাবতী, আমি তোমাকে দেখতে পাই।
সারাটা বছর তোমার জন্য আমি
পথ চেয়ে থাকি বাংলার পথে পথে
ধান বড় হয়,ধান হয়ে ওঠে ধান
তখনি স্বর্গ নেমে আসে জন্নতে।
সারাটা বছর তোমার জন্য বাঁচি
সকালের আলো মরে যায় সন্ধ্যায়
ধানের গোড়ায় ধুলো মাটি কাদা জলে
ইরাবতী আমি তোমার স্পর্শ পাই।
ধান বড় হয় , ধান হয়ে আসে ভারী
ধান ভরে যায় ভরা আকাশের স্নেহে
শিশির কী করে আত্মহত্যা করে?
ইরাবতী, তুমি ধানের সোনালী মেয়ে।
এই বাংলার সোনালী ধানের কাছে
আমার আত্মা বন্ধক দেওয়া আছে।
তুমি নবান্ন , তোমার ভেতরে রাই
তোমাকে পৃথিবী অঘ্রান মাসে পায়।
কিন্তু আমার শরীরে তোমার ঘ্রাণ
আমার শরীরে তোমার না-মোছা আলো
তোমার মেখলা উড়ে যায় বহু দূরে
এই উড়ে যাওয়া বারবার লাগে ভালো।
এর পর তুমি পোষাক খুলতে থাকো
খুলে ফেল তুমি ধান দিয়ে বোনা শাড়ি
তুমি হয়ে ওঠো একটি ধানের শীষ
এর পরও আমি সংযত হতে পারি?
ইরাবতী ,তুমি কুয়াশার ছোট মেয়ে
ইরাবতী তুমি আমার হারানো মেয়ে
ধান খেতে তুমি হয়ে ওঠো যেই ধান
আলো নেমে আসে তোমার শরীর বেয়ে।
দুব্বোর চেয়ে সুন্দর কিছু নেই।
এরপর তুমি ছিলে না কন্যা কারও
এর পর তুমি একটি ধানের ছড়া
মার্জনা কোরো যদি মার্জনা পারো।
ভালবাসা ছাড়া নবান্ন হয় নাকি
ইরাবতী, তুমি আমার লাস্য নারী
তোমার মতন আমিও নগ্ন হব
আমি কী তোমাকে জোৎস্না মাখাতে পারি?
মাঠে মাঠে যারা ধানকে আগলে রাখে
সবাই জানে না ধান পাহারার মানে
আমি তো তোমার সোনালী পাহারা দিই
আমি কী তোমাকে ডেকে নিতে পারি স্নানে?
নাভি থেকে আলো নবান্ন নিয়ে ওঠে
নবান্ন তার নিজের আলো পাঠায়
এই আলোটাকে নবান্ন বলি আমি
আলো থেমে থেমে উঠছে বিভাজিকায় ।
নবান্ন মানে অপূর্ব এক রেখা
ধানের মতন ঈষৎ নোয়ানো স্তন
মাঝখান দিয়ে চলে গেছে আলপথ
সেই আলপথে পৃথিবীর আয়োজন।
সেই আলপথে দেবতারা নেমে আসে
সেই আলপথে মায়ের মতন ভাত
সেই আলপথে গন্ধে গন্ধে আমি
ইরাবতী , আমি ধরেছি তোমার হাত।
আমার শরীরে ধান আর শুধু ধান
জামা খুলে আমি ভাসিয়ে দিয়েছি জলে
আমার শরীর অঘ্রানে যায় ভরে
জুতো পড়ে থাক গোধূলি গগণতলে।
ইরাবতী তুমি আমার লাস্য নারী
আমি কী তোমাকে পুরোটা বোঝাতে পারি?
সারাটা বছর বাঁচিয়ে রেখেছি প্রাণ
ইরাবতী তুমি পিপাসার অঘ্রান।
লাস্য যেমন খেলা করে আলো নিয়ে
সোনালী যেমন কালো নিনুয়াকে চায়
মায়েরা যেমন পুজো করে ধানখেত
পিপাসায় তবু পার্বণ থেকে যায়।
আমার লাভায় তোমার জন্ম নয়
তারার আলোয় দুজনে নগ্ন থাকি
মেয়েরা বাবাকে চিরকাল ভালবাসে
ভালোবাসতে কী ঔরস লাগে নাকি?
ইরাবতী তুমি যতটা আমার মেয়ে
ততটাই তুমি আমার হেমন্তিকা
ইরাবতী তুমি নেমে যাও তোর্সাতে
উঠে আসো তুমি খোলা চুল মরীচিকা।
ছলনা ছাড়া কি প্রেম হয় পৃথিবীতে?
মরীচিকা ছাড়া হয় নাকি ভালবাসা
পাপে, পিপাসায়, প্রবঞ্চনায় তবু
উল্টে যায় না মহাভারতের পাশা।
ইরাবতী তুমি আমার মায়ের ছায়া
আমার মায়ের স্তনের মতন স্তন
আজ অঘ্রানে প্রস্তুত করি এসো
উঠোনে উঠোনে রান্নার আয়োজন।
আমার মেয়েটি আমার মায়ের মতো
আমার প্রেমিকা আমার মেয়ের মতো
ওরা তিনজন একটি ধানের শিষ
ভালবেসে আমি করি না ইতস্তত।
ভালবাসা যদি বিপজ্জনক হয়
ভালবাসা যদি নাই করে কোনো পাপ
কী করে ধানের পুনর্জন্ম হলো
ধানের গন্ধে মুছে গেল পরিতাপ?
নবান্ন আসে নবান্ন চলে যায়
তবু নবান্ন, নবান্ন থেকে যায়।
ইরাবতী আসে ইরাবতী চলে যায়
আমার মধ্যে ইরাবতী জন্মায়।