মুগর উঠছে মুগর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা,
আকাশে মেঘের সাথে সূর্যের
জমেছে মধুর খেলা।
ভাঙতে ভাঙতে বিজন মাঠের
কুয়াশা গিয়েছে কেটে,
কখন শুকনো মাটির তৃষ্ণা
শিশির খেয়েছে চেটে।
অতটা খেয়াল রাখেনি কৃষক ,
মগ্ন ছিল সে কাজে ।
হটাৎ পুলক পবনও হৃদয়
পুষ্পিত হলো লাজে ।
ফিরিয়া দেখিল বধুটি তাহার
পিছনে আলের ‘পরে
ব
সে আসে যেন ফুটে আছে ফুল,
গোপনে চুপটি করে ।
সামনে মাটির লাল সানকিটি
জরির আঁচলে বাঁধা ,
আজ নিশ্চয় মরিচে রসুনে
বেগুন হয়েছে রাঁধা ।
হাঁসিয়া কৃষক মরাল বাঁশের
মোগর ফেলিয়া দিয়া
কামুক আঁখির নিবিড় বাঁধনে
বাধিল বধুর হিয়া ।
বরুন গাছের তরুণ ছায়ায়
দু’জনে সারিল ভোজ,
বধুর ভিতরে কৃষক তখন
পাইল মনের খোঁজ ।
মেঘ দিল ছায়া, বনও সঙ্গমে
পুড়িল বধুর আশা-;
মনে যাই থাক, মুখে সে বলিলঃ
‘মর্গে’ বর্গা চাষা ।’
শব্দটি তার বক্ষে বিধিল
ঠিক বর্শার মতো
।
‘এই জমিটুকু আমার হইলে
কার কিবা ক্ষতি হতো ?’
কাতর কণ্ঠে বধুটি সুধালোঃ
‘আচ্ছা ফুলীর বাপ,
আমাগো একটু জমিন অবে না?
জমিন চাওয়া কি পাপ ?
’
‘খোদার জমিন ধনীর দখলে,
গেছে আইনের জোরে,
আমাগো জমিন অইব যেদিন
আইনের চাকা ঘোরে ।
’
অসহায় বধু জানে না নিয়ম
কানুন কাহারে বলে-;
স্বামীর কথায় আখি দুটি তার
সূর্যের মতো জ্বলে ।
বলদে ঘোড়ায় গাড়ির চাক্কা,
নাড়ীর চাক্কা স্বামী-;
আইনের চাক্কা আমারে দেখাও
সে-চাক্কা ঘুরামু আমি ।
’
কৃষক তখন রুদ্র বধুর
জড়ায়ে চরন দুটি ,
পা তো নয় যেন অন্ধের হাতে
লঙরখানার রুটি ।
যতটা আঘাত সয়ে মৃত্তিকা
উর্বার হয় ঘায়ে
ততোটা আঘাত সইল না তার
বধুর কোমল পায়ে ।
পা দু’টি সরায়ে বধুটি কহিলঃ
‘কর কি? কর কি? ছাড়ো,
আরে মানুষে দেখলে জমিন তো দেবি না,
দুন্যাম দেবি আরও ।’
পরম সোহাগে কৃষক তখন
বধুর অধর চুমী ,
হাসিয়া কহিলঃ ‘ভূমিহীন কই?
আমার জমিন তুমি।’
আকাশে তখনও সূর্যের সাথে
মেঘেরা করিছে খেলা ,
মুগর উঠছে মুগর নামছে
ভাঙছে মাটির ঢেলা ।