মহানগরীতে এল বিবর্ণ দিন, তারপর আলকাতরার মতো রাত্রি
আর দিন
সমস্ত দিন ভরে শুনি রোলারের শব্দ,
দূরে, বহুদূরে কৃষ্ণচূড়ার লাল, চকিত ঝলক, হাওয়ায় ভেসে আসে গলানো পিচের গন্ধ;
আর রাত্রি
রাত্রি শুধু উপরে রোলারের মুখর দুঃস্বপ্ন।
তবু মাঝে মাঝে মুহূর্তগুলি
আমাদের এই পথ
সোনালী সাপের মতো অতিক্রম করে;
পাটের কলের উপরে আকাশ তখন
পাথরের মতো কঠিন,
মনে হয় যেন সামনে দেখি-
দুধারে গাছের সবুজ বন্যা,
মাঝখানে গেরুয়া পথ,
দূরে সূর্য অস্ত গেল;
ভরা চাঁদ এল নদীর উপরে,
চারদিকে অন্ধকার-রাত্রের ঝাপসা গন্ধ,
‘কিছুক্ষণ পরে হাওয়ার জোয়ার আসবে
দূর সমুদ্রের কোনো দ্বীপ থেকে,
সেখানে নীল জল, ফেনায় ধোঁয়াটে-সবুজ জল, সেখানে সমস্ত দিন সবুজ সমুদ্রের পরে
লাল সূর্যাস্ত,
আর বলিষ্ঠ মানুষ, স্পন্দমান স্বপ্ন-
যতদূর চাই ইটের অরণ্য,
পায়ে চলা পথের শেষে কান্নার শব্দ।
ভস্ম অপমান শয্যা ছাড়
হে মহানগরী!
রুদ্ধশ্বাস রাত্রির শেষে
জ্বলন্ত আগুনের পাশে আমাদের প্রার্থনা,
সমান জীবনের অস্পষ্ট চকিত স্বপ্ন।
আর কত লাল শাড়ি আর নরম বুক,
আর টেরিকোটা মসৃণ মানুষ,
আর হাওয়ায় কত গোল্ড ফ্লেকের গন্ধ,
হে মহানগরী!
যদি কোনদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে বসন্ত বাতাসে- স্কুল আর কলেজ হল শেষ, ক্লাইভ স্ট্রিট জনহীন,
দশটা-পাঁচটার দীর্ঘশ্বাস গিয়েছে থেমে,
সন্ধ্যা নামল:
মাঝে মাঝে সবুজ গাছের নরম অপরূপ শব্দ,
দিগন্তে জ্বলন্ত চাঁদ, চিৎপুরে ভিড়;
কাল সকালে কখন সূর্য উঠবে!
কলেরা আর কলের বাঁশি আর গণোরিয়া আর বসন্ত বন্যা আর দুর্ভিক্ষ
শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ
সন্ধ্যার সময়,
রাস্তায় অনুর্বর আত্মা উচ্ছ্বাসে
মাঝে মাঝে আকাশে শুনি
হাওয়ার চাবুক,
আর ঝাপসাভাবে শুধু অনুভব করি
চারদিকে ঝড়ের নিঃশব্দ সঞ্চারণ।