নারীপাঠঃ
আপনি যখন আমার সামনে ওর গল্প করেন,মাঝে মাঝে হো হো করে হাসেন, দেখে আমার কষ্ট হয়। শুনেছি এক সাথে রিক্সায় চড়ে শিল্পকলা আ্যকাডেমিতে গিয়েছেন,নাটক দেখতে।
কী কাণ্ড! এসব বুঝেও আপনি রিপিট করেন। হোয়াট ইজ দিজ?
সেবার পহেলা বৈশাখের আগের রাতে ওদের বাসায় প্রচুর খেয়ে এসে কী রসিয়ে রসিয়ে আমার সামনে গল্প করলেন:এ্যাত্তো বড় রুই মাছ! মাছে বেশ তেল ছিল। মনে হয় এখনও ঠোঁটে তেল লেগে আছে।আরো ছিল বারো পদের পিঠা।
আমি গট গট করে হেঁটে চলে আসি। আপনি একটুও ভ্রুক্ষেপ করেননি।
এবার যাব না যাব না করেও আপনার বাসায় শুক্রবার সকালে গিয়ে হাজির।আপনি একটুও অবাক হোননি।নিষ্ঠুর লোকেরাই কেবল অবাক হয় না।আমার খুব ভাল্লেগেছে যখন দেখি- আমার দেয়া মাটির খরগোশের বাচ্চাগুলো চমৎকার সাজিয়ে রেখেছেন।এক টিন বিস্কুট কিনে দিয়েছিলাম, সব খেয়ে ফেলেছেন। রাক্ষস!
তারপর একটু শোব বলে আমার সামনে শুয়ে পরলেন বিছানায়। আমি খানিকটা বিব্রত হচ্ছিলাম।আপনাকে খানিক শুকনো মনে হচ্ছিল।ইচ্ছে হচ্ছিল কপালে হাত দিয়ে দেখি,জ্বর কিনা।ওমা এক সময় দেখি মৃদু নাক ডাকছেন।
বাইরে বৃষ্টি। কতক্ষণ টেবিলের ওপর রাখা আপনার অনুদিত জন কিটসের কবিতা পড়ছিলাম।এক সময় বোর লাগে।আপনার পায়ের কাছে গুটিশুটি মেরে পড়েছিল চমৎকার এক নকশী কাঁথা।আপনার গায়ে ওটা চাপিয়ে দিলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো- কাঁথাটা সত্যি খুব সুন্দর।কে দিলো? কে দিলো আপনাকে নকশী কাঁথাটা? নিশ্চয়ই ও।
বুকের কাছে অভিমানটুকু সেফটি পিন দিয়ে আটকে রইল।
বাইরে তখনও বৃষ্টি, আপনি ঘুমিয়ে। আমি একটা গোলাপ কাঁটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
পুরুষপাঠঃ
আমি আসলেই কি দেখেছি তোমাকে? নাকি অন্য চন্দ্রমুখী? কোথায় আমাদের দেখা হয়েছিল হলো তো?বালুচরী টলটলে প্রবাহ জলের মতো কোনো প্রবাহের পাশে? নাকি দৃশ্যগুলোন আমাদের বানানো?
আঙ্গুল গুনে গুনে দিন মাস বলে দেয়া যাবে। তুমি চলে গেলে, ট্রেনে উঠে হাত নেড়ে নেড়ে। তোমার হাতকে দুর থেকে জাতীয় পতাকার মতো উড্ডীন মনে হয়েছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম স্টেশনে।ফেরিওয়ালাকে মনে হয় কে যেন বলছিল; আরেকটা সুর ধরো। আমার আর কোথাও যাবার নেই। কিচ্ছু হারাবার নেই।মনে হচ্ছিল তুমি চলে যাচ্ছো ছবির ‘ট্রেন টু পাকিস্তান ‘ মানুষগুলোর মতো গিজগিজে ট্রেনে।ধর্ম দিয়ে ভাগ করার দেশে।
তোমার বিয়ে করবার কথা,সেটাই হলো শেষমেষ।আমি তোমার বিয়েতে পকেটে কয়েক টুকরো খুচরো পাথর আর কবিতা নিয়ে গিয়েছিলাম।ইচ্ছে ছিল পাথরের নুড়ি দিয়ে বিয়ের আসর গুড়িয়ে দেই, যেমন করে প্যালেস্টাইনের শিশু ছুঁড়ে দেয় সশস্ত ইসরায়েলী সেনার দিকে অক্ষম আক্রোশে।
দেখতে দেখতে চলে গেলো দুটো বছর। আমাদের অমল তুমুল জীবন থেকে মাত্র দুটো বছর। ব্যাংকের চেকে যেমন করে লেখে ২ কোটি টাকা মাত্র। একটা দানবীয় ট্রেন ও একটা আলাদা পাসপোর্ট কত দূরে টেনে নিয়ে যেতে পারে মানুষকে!
যায় দিন অনাহারীর মতো। আমাদের আজও জন্ডিসের মতো রাত্রি।ব্লটিং পেপারের মতো দ্যা এন্ডলেস রোড।চাঁদ কথা শোনেনি বলে আড়াল হয়েছে তার জোৎসা নিয়ে অভিমানে। আমাকে আজ নিশীথে সুর্যের দেশের কবিতায় পেয়েছে। রাষ্ট্রপতি’র মতো একা।
আমার সমস্ত আকুলতা তোমার কাছে। নিবেদনে অগৌরব নেই। আর নেই বলেই আমি তোমার নাম মুখস্ত করি, মুখস্ত করবার কারনেই ধার করেছি বর্ণমালা।
এখন অরণ্য যাচ্ছে নদী’র দিকে। অরণ্য, নদীর পাশেই।তাহলে কে অরণ্য কে নদী? পাশাপাশি থাকার জন্যই কি আমাদের একাল থেকে সেকালে যাত্রা?
হয়তো। গতি আছে বলেই মানবজন্ম। শুধু তাই?
তুমি বলো। বলো।
তবে কি আমরা সবাই গোলাপ কাঁটা নিয়েই জীবন পার করি?