ভোরের আলো এসে পড়েছে ধ্বংসস্তূপের ওপর।
রেস্তোরাঁ থেকে যে ছেলেটা রোজ
প্রাতরাশ সাজিয়ে দিত আমার টেবিলে
রাস্তার মোড়ে তাকে দেখলাম শুয়ে আছে রক্তাপুত শার্ট পরে।
বন্ধুর সরে যাওয়ার রাস্তায় ডি আই টি মার্কেটের ভষ্মস্তূপ,
প্রতিরোধের চিহ্ন নিয়ে বিবর্ণ রাজধানী দাঁড়িয়ে রয়েছে,
তার বিশাল করিডোের শূন্য।
শহর ছেড়ে চলে যাবে সবাই
(এবং চলে যাচ্ছে দলে দলে)
কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপ স্পর্শ করে আমরা কয়েকজন
আজীবন রয়ে যাব বিদীর্ণ স্বদেশে, স্বজনের লাশের আশেপাশে।
তাই তার দেখা পাব বলে দানবের মতো খাকি ট্রাকের
অনুর্বর উল্লাস উপেক্ষা করে, বিধ্বস্ত ব্যারিকেডের পাশ ঘেঁষে
বেরিয়েছে ২৭মে মার্চের সকালে কেন্দ্রীভূত করে
পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলায়,
যে শিলা অন্তিম প্রতিজ্ঞায় অন্তত
প্রাথমিক অস্ত্র হতে জানে। তেমনি এক শিলার আঘাতে
বিনষ্ট হয়েছে আমার বুকের অনিদ্র ভায়োলিন।
ধ্বংসস্তূপের পাশে, ভোরের আলোয়
একটা বিকলাঙ্গ ভায়োলিনের মতো- দেখলাম তে-রাস্তার মোড়ে
সমস্ত বাংলাদেশ পড়ে আছে আর সেই কিশোর, যে তাকে
ইচ্ছের ঝড় দিয়ে নিজের মতো করে বাজাবে বলে বেড়ে উঠছিল
সেও শুয়ে আছে পাশে, রক্তাপুত শার্ট পরে।
তবে কি এই নিয়তি আমাদের, এই হিরন্ময় ধ্বংসাবশেষ
এই রক্তাপুত শার্ট আজীবন, এই বাঁকা-চোরা ভাঙা ভায়োলিন?
মধ্য-দুপুরে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, একটা তন্ময় বালক
কাচ, লোহা, টুকরো ইট, বিদীর্ণ কড়ি-কাঠ, একফালি টিন,
ছেঁড়া চট, জং-ধরা পেরেক জড়ো করল এক নিপুণ
ঔন্দ্রজালিকের মতো যত
এবং অসতর্ক হাতে কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই
প্রায় অন্যমনস্কভাবে তৈরি করল কয়েকটা অক্ষর :
‘স্বা-ধী-ন-তা’।
মাতৃভূমি, কী যেন তোমার নাম ছিলো?
পাঠ্যবই থেকে অপমানে ঝরে পড়েগৌরবের পঙক্তিমালা—৭ই মার্চ প্রশ্ন করে ২৬শে মার্চকেতুমি কি শুনতে পাওজনসমুদ্রে জোয়ারের ধ্বনি?বাংলার বধির পাহাড়ওলজ্জায় নত হয়,সাগরের