ওখানে ভীষণ খরায় ফসলের চরাচরে পাখা মেলে বোসেছে এক
বন্ধ্যার বাজপাখি, তার ঠোঁটের বিষ আমার রক্তের শহরে ঢুকেছে
শত্রুসেনারা যেমন বিজয়গর্বে ঢোকে পরাধীন দেশের ভিতর।
মা, এই পরাধীন শরীরে কোথাও মুক্ত আকাশ নেই, মাঠ নেই –
রক্তে মাংসে খরার পতাকা উড়িয়ে রেখেছে ভিন্ন শাসক সেনারা।
কতদিন ঘুমোই না মা ! সেই কবে কৈশোরের প্রথম সকালে
সংসারের গন্ধে ভেজা তোর সোঁদা বুকে মুখ লুকিয়ে নির্ভাবনায়
ঘুমিয়ে যেতাম স্বপ্নের নিরাকার সমুদ্রের ঘোলা লোনা জলে
সেই কবে, কতদিন আগে – কিছুক্ষণ বুকে রাখ, বুকের শান্তিতে।
কতোদিন ঘুমোইনি, নিদ্রার মতো জেগে আছি নিদ্রিত চোখে
_ কতোদিন, সেই কতোদিন…
ওখানে অভাব, মারী, দীর্ঘশ্বাসে আগুনের বিপুল জলোচ্ছ্বাস,
দেবদারুর শীর্ণ পাতাগুলো ঝ’রে গেছে মাটির হৃদপিণ্ডে।
সারারাত পথের নির্জনতা সরিয়ে সরিয়ে মানুষের মৃত হাড়
কান্নার কঙ্কাল দেখে আমি আর কোনোদিন কবরের পাশে যাই নি
সড়কের জীবন্ত কবর এসে বুকের ভূমিতে জেগেছে
_ সম্মিলিত মৃত্যুর উৎসব।
জানালাগুলো এখোনো খুলিস নি মা?
কতোদিন আকাশ দেখিনি, অনায়াসে পাখা মেলে উড়ে যাওয়া
পাখিদের পালক ঝরে পড়া, রঙিন প্রজাপতি, নক্ষত্র, মেঘ
কতোদিন ঝড়ের পূর্বাভাসে সঞ্চিত কালো মেঘ দেখিনি।
এ-দুটো অনিদ্রায় পোড়া পাথর চোখে
তোর মাতৃত্বের চুমু দিয়ে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দে
কতোদিন ঘুমোই নি মা, কতোদিন ঘুমোই না…