মেঘ বালিকার জন্য রূপকথা

আমি যখন ছোট ছিলাম
খেলতে যেতাম মেঘের দলে,
একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতুহলে–
“এই ছেলেটা,নাম কি রে তোর?”

আমি বললাম,’ফুসমন্তর !’
মেঘবালিকা রেগেই আগুন–
“মিথ্যে কথা । নাম কি ওমন হয় কখনো ?”

আমি বললাম,“নিশ্চয়ই হয় । আগে আমার গল্প শোনো ।”
সে বলল, “শুনবো না যা-
সেই তো রাণী, সেই তো রাজা
সেই তো একই ঢাল তলোয়ার
সেই তো একি রাজার কুমার পক্ষীরাজে
শুনবো না যা ।ওসব বাজে ।”
আমি বললাম, “উম তোমার জন্য নতুন ক’রে লিখব তবে!”

সে বলল, “সত্যি লিখবি ?
বেশ ! তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে।
মনে থাকবে ? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি ।”
আমি বললাম, “তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী ।”

লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু-চার পাতা
হঠাৎ তখন ভুত চাপল আমার মাথায়-
খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে
গিয়ে দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ-তল্লাটে।
একজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম
এগিয়ে গিয়ে বললাম তাকে,“তুমি কি সেই ?
মেঘবালিকা,তুমি কি সেই ?”

সে বললো, “মনে তো নেই,আমার ওসব মনে তো নেই ”
আমি বললাম, “তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে”
সে বলল, “সঙ্গে আছে ?ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে –
আর হ্যাঁ, শোন-এখন আমি মেঘ নই আ–,
সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়.. ।”
বলেই হঠাৎ এক পশলায়-
চুল থেকে নখ- আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে-
অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে
মিলিয়ে গেল খরস্রোতায়
মিলিয়ে গেল দূরে কোথায় ,দূরে দূরে…।
“বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়…বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়-”

আপন মনে বলতে বলতে আমিই কেবল বসে রইলাম
ভিজে একশা কাপড় জামায়
গাছের তলায় বসে রইলাম
বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য?

এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি আমায় চিনতে পেরে বলল,
“তাতে মন খারাপের কি হয়েছে!
যাও ফিরে যাও-লেখ আবার ।
এখন পুরো বর্ষা চলছে
তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত
তুমি-ও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে
বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে ।”

এক পৃথিবী লিখবো আমি
এক পৃথিবী লিখবো বলে ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম
ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহন বনে
সঙ্গী শুধু কাগজ কলম
একাই থাকব , একাই দুটো ফুটিয়ে খাব—
দু এক মুঠো ধুলো বালি
যখন যারা
আসবে মনে তাদের লিখব,লিখেই যাব
এক পৃথিবীর একশো রকম স্বপ্ন দেখার
সাধ্য থাকবে যে-রূপকথার—
সে রূপকথা আমার একার ।
ঘাড় গুঁজে দিন লিখতে লিখতে
ঘাড় গুঁজে রাত লিখতে লিখতে
মুছেছে দিন—মুছেছে রাত
যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল,
মনে পড়ল সাল কি তারিখ,
বছর কি মাস সেসব হিসেব আর ধরিনি
লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি
এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও শেষ করিনি ।

সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল, খাতার উপর
আজীবনের লেখার উপর
বৃষ্টি এল এই অরণ্যে।
বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত
এ-গাছ ও-গাছ উড়ছে পাখি
বলছে পাখি, “এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি ।”
বলছে ওরা, “কবির জন্য আমরা কোথাও,
আমরা কোথাও,আমরা কোথাও হার মানিনি—”

কবি তখন কুটির থেকে
তাকিয়ে আছে অনেক দূরে
বনের ‘পরে, মাঠের ‘পরে নদীর ‘পরে
সেই যেখানে সারাজীবন বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে,
সেই যেখানে কেউ যায়নি কেউ যায় না কোনদিনই

আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে
সেই দেশে সেই ঝরনাতলায়
এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ায়
সোনায় মোড়া মেঘহরিণী
কিশোর বেলার সেই হরিণী ।

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

খিড়কি

খিড়কি ছিল পাশের বাড়িরখিড়কি ছিল মনেরখিড়কি ছিল যখন তখনখিড়কি কিছুক্ষণের । খিড়কি ছিল পথের পাশেহলুদ গাঁদাফুলের,খিড়কি ছিল আকাশ ভরামেঘের কালোচুলের

বাকি অংশ »

কৃপণ

আমি ভিক্ষা করে ফিরতেছিলেমগ্রামের পথে পথে,তুমি তখন চলেছিলেতোমার স্বর্ণরথে।অপূর্ব এক স্বপ্ন-সমলাগতেছিল চক্ষে মম-কী বিচিত্র শোভা তোমার,কী বিচিত্র সাজ।আমি মনে ভাবেতেছিলেম,এ

বাকি অংশ »

এক গাঁয়ে

আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি।সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ।তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখিতাহার গানে আমার নাচে বুক।তাহার দুটি পালন-করা ভেড়াচরে

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

কুইন্স লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হলো “হোপ নেভার ডাইস” প্রামাণ্যচিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী

নিজস্ব প্রতিবেদক নিউইয়র্কের কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হলো কোভিড-১৯ মহামারিকালে মানুষের বাস্তবতা, কষ্ট এবং মানবিক বিপর্যয় নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “Hope

বাকি অংশ »

নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক আবৃত্তি সন্ধ্যা

“আলোকের এই ঝর্ণাধারায়” নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক আবৃত্তি সন্ধ্যা নিজস্ব প্রতিবেদক বাংলা আবৃত্তি জগতের কিংবদন্তি শিল্পী ভাস্বর

বাকি অংশ »

বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাব,বনভূমির ভিতরে আরও গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাব,আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড়

বাকি অংশ »
Scroll to Top