যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।
দরিয়ানগরে জন্ম, পৃথিবীর সর্ব প্রান্ত আমার স্বদেশ।।
এ বাংলার হাটে মাঠে, ধানীরং কিষাণীর বাটে,
দিগন্তের মেঠোপথে, সাধু সন্ত অথবা বখাটে
নদী ও নারীর বাঁকে পাখপাখালির ঝাঁকে
হাজার বছর ধরে জীবনের আনন্দরা হাঁটে
সাম্পান ভাসায় তারা আঁশনাই দরিয়ার তরঙ্গে অশেষ —
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।।
সাইবেরিয়ার শাদা বরফের টুকরো মুখে সিডনি টরেন্টো হয়ে
হাজার ডানার পাখি উড়ে যায় অতিদূর আমাজন বাঁকে,
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে জগতের তিনভাগ জল খুঁটে খুঁটে
মাদাগাসকার ঘুরে এসে পলিস্রোতে তাহিতির ঘাটে
ভাটিয়ালী ভাওয়াইয়ার তাম্রবর্ণ সহোদর সহোদরা হাঁটে –
একতারা দোতারার সুরে সুরে আউলায় বাউলের আলুথালু কেশ —
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।।
আমাকে চিনেছে লালকাঁকড়ার হানা, মালকাবানুর ডানা,
রূপচান্দা, লইট্টা আর ইলিশের কেউ,
উজান-ভাটির স্রোতে দরিয়ার মা-চিংড়ি, সূর্যাস্তের ঢেউ,
শক হূন আর্য আর অনার্যের পলল মানবস্রোতে
অনন্তর শান্তিবিশ্বে আমাকেই ডাকে –
সাদা-কালো-তামাটে মানুষ গায় মহুয়া মলুয়া পালা,
হাঁটে তারা মানবসাগরতীরে, গায়ে লাল-সবুজের বেশ —
যতদূর বাংলা ভাষা, ততদূর এই বাংলাদেশ।।