কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলবী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ,শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত নয়নে –
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজরই পায়ের ধূলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ, সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলবী
ভাবিলেন, আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের ‘পরে’
স্পর্ধার কাজ, হেন অপরাধ কে করেছে কোন কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তাঁর ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, ” আমি ভয় করি নেকো, যায় যাবে শির টুটি’
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন ছার,
ভয় করি নেকো, ধারি নেকো ধার, মনে আছে মোর বল।
বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।”
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কিল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
ওস্তাদেরে ডাকি, বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে
সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা-।”
ওস্তাদ কন,”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনে, হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ কহেন, -”সেদিন প্রভাতে
দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে,
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি, শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায় বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল নাকো কেন সে চরণ, স্মরি’ ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষক আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি ,বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষা-গুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।”