বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে
মাঝিরে কন , “বলতে পারিস্ সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফেলিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, “সারা জনম মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি- আনাই মাটি !”
খানিক বাদে কহেন বাবু,”বল্ তো দেখি ভেবে,
নদীর ধারা ক্যাম্নে আসে পাহাড় হতে নেবে?
বল্ তো কেন লবনপোরা সাগরভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, “আরে মশাই , অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, “এই বয়সে জানিস নেও তাকি?
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি।”
আবার ভেবে কহেন বাবু, “বল্ তো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বল্ তো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলে, “আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?”
বাবু বলেন, “বলব কি আর, বলব তোরে কি তা–-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুব্লো বুঝি দুলে।
মাঝিরে কন, “একি আপদ ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুব্লো নাকি নৌকো এবার ? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, “সাঁতার জানো?” মাথা নাড়েন বাবু,
মুর্খ মাঝি বলে, “মশাই , এখন কেন কাবু?”
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব কোরো পিছে,
তোমার দেখি জীবনখানা ষোল -আনাই মিছে!”