ধন্য সেই পুরুষ

ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;
ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে
প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মতো উপত্যকায়;
ধন্য সেই পুরুষ, হৈমন্তিক বিল থেকে যে উঠে আসে
রঙ-বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে।
ধন্য সেই পুরুষ কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে
ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।

ধন্য আমরা, দেখতে পাই দূর দিগন্ত থেকে এখনো তুমি আসো
আর তোমারই প্রতীক্ষায়
ব্যাকুল আমাদের প্রাণ, যেন গ্রীষ্মকাতর হরিণ
জলধারার জন্যে। তোমার বুক ফুঁড়ে অহংকারের মতো
ফুটে আছে রক্তজবা, আর
আমরা সেই পুষ্পের দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের
চোখের পলক পড়তে চায়না,
অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা।
দেখ, একে একে, সকলেই যাচ্ছে বিপথে অধঃপাত
মোহিনী নর্তকীর মতো
জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে,
বিশ্বাস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্যে
সত্য খান খান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন
কুমোরের ভাঙা পাত্রের মতো,
চাটুকারদের ঠোঁটে অষ্টপ্রহর ছোটে কথার তুবড়ি,
দেখ, যে কোন ফলের গাছ
সময়ে-অসময়ে ভরে উঠছে শুধু মাকাল ফলে।
ঝলসে-যাওয়া গাসের মতো শুকিয়ে যাচ্ছে মমতা
দেখ, এখানে আজ
কাক আর কোকিলের মধ্যে কোনো ভেদ নেই।
নানা ছল ছুতোয়
স্বৈরাচারের মাথায় মুকুট পরাচ্ছে ফেরেব্বাজের দল।

দেখ, প্রত্যেকটি মানুষের মাথা
তোমার হাঁটুর চেয়ে এক তিল উঁচুতে উঠতে পারছে না কিছুতেই।
তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো
হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিল শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সংকটের দিনে
আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তূপে বসে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যাথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্ততিগানে। কেননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।

ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে
চিরকাল, গান হয়ে
নেমে অসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর
কখনো ধুলো জমতে দেয়না হাওয়া,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের উপর পাখা মেলে দেয়
জ্যোৎস্নার সারস,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের উপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তোযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

স্বাধীনতা বাঙালির

দেখি নাই আমি নেতাজি সুভাষ,মাও সে-তুং ,লেনিন।দেখা হয় নাই বীর ক্ষুদিরাম অথবা সূর্যসেন।দেখেছি কেবল শাসন – শোষণে মানুষ যে নির্জীবদেখেছি

বাকি অংশ »

ছবি আঁকিয়ে

আমার রঙের বাক্স থেকেঢালবো এমন নীল,আকাশ পাতাল খুঁজলে তবুপাবে না তার মিল।আমার তুলির ছোঁয়ায় শাদাপাতায় পড়বে দাগ।হরিণ যাকে ভয় পাবে

বাকি অংশ »

তোমারই পদধ্বনি

এই লেখা উঠে এসেছে তোমার স্বদেশের বুক থেকে
এই খেলা উঠে এসেছে এ দেশের প্রতিটি নদী থেকে,
যে সব নদী তরঙ্গায়িত হতো

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাব,বনভূমির ভিতরে আরও গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাব,আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড়

বাকি অংশ »

খিড়কি

খিড়কি ছিল পাশের বাড়িরখিড়কি ছিল মনেরখিড়কি ছিল যখন তখনখিড়কি কিছুক্ষণের । খিড়কি ছিল পথের পাশেহলুদ গাঁদাফুলের,খিড়কি ছিল আকাশ ভরামেঘের কালোচুলের

বাকি অংশ »
Scroll to Top