আমাদের গঞ্জের ছিদাম পাইকের কথা বলি
তাসের আড্ডা, সস্তা চা খানা, তামাকের
কালচে-নীল ধোঁয়ার মাঝে পরাণ কামারের
আটচালায় নানা স্মৃতি নিয়ে সে
ব্যস্ত থাকে সর্বদাই।
-ওহে জগবন্ধু, কত দিয়ে কিনলে ইলিশ?
ধান কী দর, কালু, ছেলেটাকে পড়িও ব্যাপারী
আমরা জোয়ান কালে, হুঁ হুঁ বাবা –
এই সব বলতে ছিদাম শিবনেত্র হয়ে যেত,
সেই কাল সামনে এসে হাত-পা নাচাত প্রত্যহ।
সেবার কী যেন হোল ঢাকায় সদরেও
পুলিশ কী নিয়ে যেন গুলি ও লাঠিতে
বহু ছেলে মেরে ফেলে। গঞ্জেও
এসেছে হরতাল, নিতাই, গফুর, সাধু,
জলিল, পঞ্চা বসে ছক কাটে কী কী
করা যাবে। বৃদ্ধ কেউ পাশে
বলে – বাবা সব, ঝাণ্ডায় মোদের কথা
লিখে দিও, অজন্মার খাজনা মকুব চাই
ওসির জুলুম বড়, চৌকিদারি ট্যাকসোও দেব না।
ছিদাম জাবর কাটে কি আর মিছিল হবে
হুঁ হুঁ বাবা গান্ধী মহারাজ মিস্টার জিন্নাহর কালে
হইছে মিছিল আর তোরা হুঁ হুঁ … বাবা।
গঞ্জেও চলেছে গুলি, দু’জন মরেছে
জখম অনেক জন। আশপাশ গাঁয়ের কিষাণ
স্কুলের সকল ছেলে সাঁকো ভেঙ্গে পুলিশের দঙ্গল
কাসুন্দ্যার চরে ধরে চারিদিক থেকে
ন্যাজা ও বাঁশের লাঠি, বল্লম, গুলতি
দশ হাজার লোক হবে ঘিরে আসে খাকীর দঙ্গল
আবার চলল গুলি, কতজন মরছে কে জানে।
কিষাণেরা ঘিরে ধরে অবশেষে মারছে পুলিশ
বারান্দাঅলা টুপি পরা অফিসার হাত জোর করে
মাফ চায়।
এদিকে ছিদাম পাইক গান্ধী-জিন্নাহর কাল ভুলে
পিট পিট করে চায় আরে এ ত জব্বর লড়াই
হুঁ হুঁ বাবা কিষাণের ব্যাটা তেজালো হাতে
হাতিয়ার দিয়ে জঙ্গ করে। হুঁ হুঁ বাবা দেখালি লড়াই…।
নিষিদ্ধ জার্নাল থেকে
ভোরের আলো এসে পড়েছে ধ্বংসস্তূপের ওপর।রেস্তোরাঁ থেকে যে ছেলেটা রোজপ্রাতরাশ সাজিয়ে দিত আমার টেবিলেরাস্তার মোড়ে তাকে দেখলাম শুয়ে আছে রক্তাপুত