মানুষ, হে মানুষ!
ভোগবিলাসী মানুষ; একবার চোখ বুজে ভেবে দেখ
তুমি রোজ কতটা খাও, যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে কত বেশি?
তোমার সংগ্রহে রেখেছ কত শত বস্ত্র, সাজসজ্জার সামগ্রী,
যতগুলো প্রয়োজন তার চেয়ে কত বেশি?
তুমি খ্যাতির মোহে কতটা অন্ধ,
যা নি:শেষ করেছে তোমার হৃদয়ের শুদ্ধ ভালোবাসা!
তুমি হাত বাড়িয়ে রাখ মানুষের হাতে হাত,
কাঁধে মেলাও কাঁধ, কর আলিঙ্গন
তা কি অন্তর থেকে?
না কি ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র মত শুধুই দায়সারা সামাজিক বন্ধন?!
হে মানুষ! সম্পদশালী, প্রাচুর্য্যময় মানুষ
তুমি ঠিক কতটুকু মানবিক? যতটুকু মানুষকে দেখানো যায়!
তুমি কতটা দানশীল? যা তোমার উচ্ছিষ্ট তাই কর দান!
তোমাকে আমি দিয়েছি অনেক…
তুমি ঘুরে বেড়াচ্ছ দেশ থেকে দেশান্তরে
আমার ভেতরের বাতাসকে ভেদ করে
তোমার যান্ত্রিক বাহনের অপ্রতিরোধ্য গতিতে তুমি নেশাগ্রস্ত!
আর পুঁজিবাদী সভ্যতার কলখানার কালো ধোঁয়ায়
আমার মেঘেরা উত্ত্যক্ত, ভীষণ ক্লান্ত।
আমি মহাপৃথিবী বলছি
আমারও প্রাণ আছে, আছে বাঁচার অধিকার!
হে শিক্ষিত সভ্য মানুষ
ব্যক্তিগত অধিকার প্রাপ্তির জন্য তোমাদের কত মিটিং মিছিল
কত হট্টগোল আর চিৎকার!
কিন্তু কেন ভাবছ না,
আমার বরফপুঞ্জ গলে যাচ্ছে ভীষণ, অসহনীয় গরমে,
আমার মহাসমুদ্রের পানিকে তোমরা করছ দূষিত প্রতিমূহুর্তে,
আমার ক্লান্ত মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে ঝরতে পারছে না ছন্দে ও আনন্দে!
আমার ভেতরের তুষার প্রবাহকে করছ তোমরা বাঁধাগ্রস্ত,
শুভ্র তুষারে আমি সাজাতে পারছি না
আমার মৃত্তিকা আর বৃক্ষবন।
তোমাদের বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য
আমার চন্দ্র-সূর্য আজ বড্ড বেশি অসহায়!
মানুষ, অতি আধুনিক মহাব্যস্ত মানুষ একটু শান্ত হও,
ভোগবিলাস আর অপচয়ের উন্মাদনায় মেতে থাকা মানুষ
একটু থামো, খুব বেশি ক্ষতি হবে না তোমাদের!
আমারও যে কথা আছে…
আমিও বলতে চাই শত সহস্রকালের বেদনার কথা।
মানুষে-মানুষে, ধর্মে-ধর্মে, দেশে-দেশে, যুদ্ধে-অযুদ্ধে রক্তপাত!
রাজনীতি আর আধিপত্য বিস্তারে ক্ষমতার বেহুঁশ লড়াই,
প্রতিহিংসার পারমানবিক বোমার আঘাতে
আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি ক্রমাগত,
স্তব্ধ হয়ে কান পেতে দাও সময়ের কণ্ঠস্বরে
শুনতে পাবে আমার আর্তনাদ,
আমিও বাঁচতে চাই আমারও আছে প্রাণ, আছে নিজস্ব গতি।
আমি
আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে । আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠল আলো পুবে পশ্চিমে । গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম