মংগলির কথা

এই কনটাকটর বাবু এক গেলাস জল হবেক
পাথরখাদানে কাজ করছিলম
বড় পিয়াস লাগেছে,
আমার নাম মংগলি গো মংগলি
আমাকে ইখানে সবাই চিনে
ওই যে তুমাদে পবনা আছে না
উ আমার দাদা লাগে,
না না আমার আখন বসার সময় নাই
তুমি জল দিবে ত দাও
অমন হাঁ করে অত দেখছ কী,
কী বলছ আমার বিহা
তার আখন কী
সে কবে ছুটুবেলাতে হইছিল
তাবাদে মরদ আমাকে ছাড়ে দিইছে
আর লিয়ে যায় নাই
ইসব খুব দুখের কথা,
তবে তার লাগে পরবদিনে লাচ করা আমি ছাড়ব ক্যানে
আঃ কী যে বলঅ
আমাদে ঘরে লাচ দেখতে আসবে তুমি
হাসালে দেখছি কনটাকটরবাবু,
তাবাদে একদিন সত্যি তুমি লাচ দেখতে চলে আলে
তারপর শাড়ি দিলে গয়না দিলে
ভালবাসা দিলে,
বিহা করবে ঘরে লিয়ে যাবে
আমরা ছুটু জাত
কী বললে তুমি ই যুগের লেখাপড়া জানা বাবু
জাতপাত কুছু মানঅ নাই
কইলকাতায় বাংলাবাড়ি মটরগাড়ি,
যাঃ কী যে বলঅ কনটাকটরবাবু
বনের ফুল ত বনে থাকে
তাকে আবার বাংলাবাড়ির ফুলদানীতে সাজাবে ক্যানে
ভালবাসা আঃ তুমি বড় হুশমা লোক হে
তাবাদে দিন গড়াল মাস গড়াল
বুনো ফুলের বাস গেল
তাজা ফুল বাসী হল,
তখেন বাবু একদিন টিভি কলের বাবুর মতন বললেক
বিয়ার কথা কখন বলেছি কী যে বলিস,
বললম তাহালে ভালবাসা লিলে শরীর লিলে
লতুন একটা শরীরের জন্মঅ দিলে
ইসবের কী হবেক?
কী বললে পাঁচশটাকা লিয়ে তুমার জিবগাড়িতে ডাক্তরখানায়।

তুই তাহালে ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে গেলি
তুই তাহালে আলাদা কুছু লস,
দাঁড়া তোকে দেখাছি
ই বলে যখন টাঙ্গি হাতে ছুটে আলম
তখন পালাই গেছে কুত্তাটা
আমি ছাড়ি নাই দিনরাত খুঁজে বেড়াই,
খুঁজতে খুঁজতে একদিন রাতের বেলা
ধরে ফেললম কোয়ার্টারে
তখন দেখি আমাকে দেখে বালিশ হাতাড়ছে
বললম বালিশ হাতড়ে খুঁজছ কী
পিস্তলটা ত আমার হাতে
ভালে দ্যাখ কেমন সাজেছি আমি
আ্যাকহাতে পিস্তল আরেক হাতে টাঙ্গি,
ভালবাসা – ভালবাসার মানুষমারা পাপ
তাহালে আমার সঙ্গে ভালবাসার ব্যাওসা করা
ফুরতি লুটে গতরটাকে ছিবড়া করা
ইসব কন পাপ লয় তাই ন কনটাকটরবাবু,
তোর ঘরে বউ আছে সে বিধবা হবেক
কই তাদের কথা আগে ত কখনঅ শুনি নাই
ছাড় তুই আমার পা ছাড় বলছি,
থুঃ থুঃ আ্যকটা ভদ্দলোক লেখাপড়া জানা বাবু
ভুলি কুকুরের পারা আমার পায়ের কাছে
মিউ মিউ করে কাঁদছে,
দ্যাখে যাও ওগো তুমরা সবাই দ্যাখে যাও
ছিঃ ছি টাঙ্গি দিয়ে মারব কী
ই টাঙ্গি দিয়ে আমার বাপ ত কখনঅ ভুলি কুকুর মারে নাই
মারলে ত আমার টাঙ্গিটাই লস্ট হবেক
ছাড়ে দিলম আমি পাথর খাদানের মংগলি
উয়াকে শেষতক ছাড়েই দিলম।

গেলম লদীর কাছে
লদীকে বললম তুমি আমাকে লাও
কল কল করে বান বইছিল
পাহাড়া লদীর বান
আমি তখেন এক গলা জলে গা ডুবাই দিইছি,
লদী বললেক এই মংগলি তুই করিস কী
মরে গেলে ত হার‍্যে গেলি
তুই না হারু সদ্দারের বিটি বঠিস
তোর ঠাকুর্দা একদিন সিধু কানুর কাঁধে কাঁধ দিইছিল
যাঃ আজ তোর সব ময়লা আমি ধুয়ে দিলম
জল থাকে মাথা খাড়া করে উঠ
ই পাথরখাদানের মাটি আর গাঁ গেরামের মাঝে
বাবু আর বেনিয়াদে ব্যাওসার ফাঁদ থাকে
আরঅ হাজার হাজার লাখঅ লাখঅ মংগলিকে পাহারা দিবার লাগে
তীর কাঁড় আর টাঙ্গি হাতে সদ্দারের পারা
তুই যা
রুখে দাঁড়া
তুই রুখে দাঁড়া।

শেয়ার করুনঃ

প্রাসঙ্গিক

মে-দিনের কবিতা

প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্যধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্যকাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,গান

বাকি অংশ »

একটি দুর্বোধ্য কবিতা

এবার লক্ষ্মীশ্রী মুছে গেছেলেগেছে কি তীব্র রূপটানএইবার পথে বেরোলেইসকলের চক্ষু টানটানবাড়ি ফিরে সেই এক সংসারসেই এক সাধারণ স্বামীআজ শান্ত, কাল

বাকি অংশ »

সাম্প্রতিক সংযোজন

বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাব,বনভূমির ভিতরে আরও গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাব,আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড়

বাকি অংশ »

খিড়কি

খিড়কি ছিল পাশের বাড়িরখিড়কি ছিল মনেরখিড়কি ছিল যখন তখনখিড়কি কিছুক্ষণের । খিড়কি ছিল পথের পাশেহলুদ গাঁদাফুলের,খিড়কি ছিল আকাশ ভরামেঘের কালোচুলের

বাকি অংশ »
Scroll to Top